১৯৮৪ সালের ৩১ শে মে গভীর সেই রাত। ঘুমন্ত চারশতাধিক বাঙ্গালির নৃশংস খুনের স্বাক্ষী হয়েছিলো বরকল উপজেলার ভুষনছড়াবাসী।বাংলাদেশের ইতিহাসে এমন জগন্য ঘটনা বিরল।কিন্তু ৩৬ বছর পার হলেও রাঙামাটি জেলার ভূষণছড়ায় সংঘটিত গণহত্যার বিচার হয়নি আজও। ভূষণছড়ার নিরীহ চার শতাধিক বাঙালি হত্যার সাথে জড়িত খুনিদের দ্রুত চিহ্নিত করে বিচার এবং ফাঁসির দাবি জানিয়েছেন ভুক্তভোগী পরিবারের বেঁচে যাওয়া সদস্যরা।
এ বিষয়ে ভুষনছড়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়াম্যান মো মামুনর রশিদ মামুন বলেন, ১৯৮৪ সালের ৩১ মে ভূষণছড়া গণহত্যা দিবস পার্বত্য চট্টগ্রামে সংঘটিত হত্যকান্ড-গুলোর মধ্যে সবচেয়ে বৃহৎ এবং ভয়াবহ হত্যাকান্ড ছিলো ভূষণছড়া গণহত্যা। এই দিনে রাঙামাটি জেলার বরকল উপজেলার ভূষণছড়া ও তার পার্শ্ববর্তী এলাকার বাঙালিরা এই নির্মম গণহত্যার শিকার হন।
১৯৮৪ সালের ৩০ মে দিবাগত রাত আনুমানিক ৪টা থেকে পরদিন সকাল ৮টা ৩০মিনিট পর্যন্ত সময়ে অর্থাৎ ৩১ মে সংঘটিত পার্বত্য চট্টগ্রামের সবচেয়ে কলঙ্কজনক অধ্যায় ভূষণছড়া গণহত্যা।
‘‘কলাবুনিয়া,গোরস্থান, ভূষণছড়া, হরিণা হয়ে ঠেকামুখ সীমান্ত পর্যন্ত বিস্তৃত এই বিরাট এলাকা জুড়ে সন্ধ্যা থেকে আপতিত হয় ভয়াল নিস্তদ্ধতা। কুকুর শিয়ালেরও সাড়া শব্দ নেই। আর্মি, বিডিআর, ভিডিপি সদস্যরাও ক্যাম্পে বন্দি। অতর্কিত পূর্ব দিক থেকে প্রথম ধ্বনিত হয়ে উঠল একটি গুলির শব্দ। তৎপরই ঘটনাবলীর শুরু। চুতর্দিকে ঘর-বাড়ীতে আগুন লেলিহান হয়ে উঠতে লাগল। উত্থিত হতে লাগল আহত নিহত অনেক লোকের ভয়াল চিৎকার এবং তৎসঙ্গে গুলির আওয়াজ , জ্বলন্ত গৃহের বাঁশ ফোটার শব্দ, আর আক্রমণকারীদের উল্লাস মূখর হ্রেসা ধ্বনি।
এভাবে হত্যা, অগ্নিসংযোগ, আর্তচিৎকার ও উল্লাসের ভিতর এক দীর্ঘ গজবি রাতের আগমন ও যাপনের শুরু। চিৎকার মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধ নয়?
পার্বত্যাঞ্চলের এসব অপরাধীর বিচারের ব্যাপারে কোন প্রকার বাধা থাকতে পারে না। আর থাকলেও তাকে ন্যায় সঙ্গত বাধা হিসাবে আখ্যায়িত করার কোন সুযোগ নেই। সর্বোপরি পার্বত্য চট্টগ্রামের শান্তি-শৃঙ্খলা উন্নয়ন করতে হলে যুদ্ধাপরাধীদের ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখে প্রশ্রয় দেয়ার কোন সুযোগ নেই। কেননা সন্ত্রাসীরা ক্ষমার দৃষ্টিকে কখনই সরকারের উদার দৃষ্টি ভঙ্গি হিসাবে দেখে না। তারা একে সরকারে দুর্বলতা হিসাবেই গ্রহণ করে থাকে। এবং সঠিক পথে ফিরে আসার পরিবর্তে তারা বরং আরো বেশি করে অপকর্মে লিপ্ত হওয়ার উৎসাহ বোধ করে।